
এম.ফজলুল করিম::
বায়েজিদ একজন মানুষের নাম। চকরিয়া উপজেলার কৃতি সন্তান, ইউ.এন.এইচ.সি.আর এর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা রোহিঙ্গা রিফিউজির কারণে ইউ.এন.এইচ.সি.আরের কর্মকর্তা হয়ে ককসবাজার অফিসে কর্মরত আছেন। তিনি এন.জি.ও’র বিভিন্ন নীতি নিধারর্ণী সভায় প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। ইউ.এন.এইচ.সি.আর এর সভায় ককসবাজার সরকারী কলেজ, ককসবাজার সিটি কলেজ, ককসবাজার সরকারী মহিলা কলেজ, বিভিন্ন স্কুল কলেজকে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করছেন।
ককসবাজার সরকারী কলেজ, ককসবাজার সিটি কলেজের জন্য দুটি বাস বরাদ্ধ দিয়েছেন অথচ উখিয়া কলেজ রোহিঙ্গার কারণে বেশী চাফারার হয়েও কেউ উখিয়া কলেজের কথা বলছেন না ঠিক সেই মুহুর্তে বায়েজিদ ভাই উখিয়া কলেজের জন্য একটি বড় বাস বরাদ্ধ দেয়ার দাবী জানালে উক্ত সভায় উখিয়া কলেজকেও একটি বড় বাস দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বায়েজিদ ভাই ঘটনা দেখে উখিয়া কলেজ কার্যালয়ে আসলেন এবং বললেন আপনারা চুপ মেরে বসে রয়েছেন কেন? ককসবাজার সরকারী কলেজ, ককসবাজার সিটি কলেজ বড় বড় বাস সাহায্য নিয়ে নিল, আর আপনাদের কোন খবর নাই। উখিয়া কলেজের শুভাকাঙ্খী হয়ে আমি নিজে প্রস্তাব পেশ করে উখিয়া কলেজের জন্য একটি বড় বাস ব্যবস্থা করিয়ে নিলাম। আজ কিংবা আগামী কালের মধ্যে ইউএনএইচসিআর বরাবরে একখানা দরখাস্ত লিখে জমা করেন। সম্ভবত: এক মাসের মধ্যে বাস চলে আসবে। বায়েজিদ ভাই এর মুখ থেকে কথাটি শুনে উনাকে কিভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাব ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কোথায় চকরিয়া কোথায় উখিয়া! তিনি কিভাবে উখিয়া কলেজের উপকারটি করলেন! উখিয়া কলেজ আজীবন বায়েজিদ ভাইকে মনে রাখবেন।
উখিয়া কলেজের হৃদয়ে বায়েজিদ ভাই এর নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। উনি দাপ্তরিক কাজে বেশ কয়েকবার উখিয়া কলেজ ক্যাম্পসে এসেছিল। উনি সারামাঠ জুড়ে ডাব্লিউএফপি এর গোডাউন দেখতে পেয়েছিল। কলেজের প্রতিটি রুমে ২০০ আর্মি সদস্য, ১২০ জন বিজিবি সদস্যদেরকে দেখেছেন। অর্থাৎ ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাকে নিয়ন্ত্রণ করার সদয় দপ্তর ছিল উখিয়া কলেজ, উখিয়া কলেজের কোন স্থানে তিল পরিমাণ জায়গা ছিল না। প্রায় দুই বৎসরের অধিককাল তাঁরা অবস্থান করেছেন।
১০ লক্ষ রোহিঙ্গাদের খাবার সরবরাহ করতেন ডাব্লিউএফপি। তাঁদের সমস্ত মালামাল, উখিয়া কলেজ মাঠের গোডাউনে রক্ষিত ছিল। সেখান থেকে নিয়ে নিয়ে রোহিঙ্গাদেরকে বিতরণ করত। উখিয়া কলেজের বাস্তব চিত্রটা বায়েজিদ ভাই অনুধাবন করেছিলেন বলে উপযাচক কলেজের জন্য গাড়ীর দাবী দিয়ে ব্যবস্থা করিয়ে নিয়েছিলেন। এই জমানায় বায়েজিদ ভাই এর মতো উপকারী লোক ক’জন পাবেন। সাবাস বায়েজিদ ভাই, মুহুর্তে আপনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও রক্তিম অভিনন্দন। বর্তমানে বাসটি সকাল বেলায় মরিচ্যা যৌথ চেকপোষ্ট পর্যন্ত গিয়ে শিক্ষার্থী আনয়ন করে দুপুর ১.৩০টায় হ্নীলা পর্যন্ত শিক্ষার্থী পৌঁছে দিয়ে বাস ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। ড্রাইভারের বেতন ২০ হাজার টাকা হেলপারের বেতন ১০ হাজার টাকা। এছাড়াও ঈদে কোরবানে একমাসের বেতনের সমান বোনাস আছে। ড্রাইভার শাহজালাল শিক্ষার্থীর সাথে বেশ বন্ধু সুলভ আচার-ব্যবহার করে। কলেজের গাড়ীর প্রতি যতœশীল মনে হয়েছে আমার। বেশী সুবিধা ভোগ করেছেন ডাব্লিউএফপি। তাঁরা উল্লেখযোগ্য সাহার্য্য করেননি। নতুন অনার্স ভবনের প্লাস্টার, রং, দরজা, জানালা গুলো করে দিয়েছেন। তাঁদের মালের গাড়ীতে ১ম কলেজ গেইটটি ভেঙ্গে ফেলেছিল। তবে ভিন্ন ধরনের নতুন একটি কলেজ গেইট নির্মাণ করে দিয়েছেন। কলেজ এর মাঠটি খেলার উপযোগী করে দিয়েছেন। শুনেছি সর্বমোট ৩৫ লক্ষ টাকার কাজ করে দিয়েছেন। আমরা যখন কলেজ এর পক্ষ থেকে প্রতিমাসে ১৩ লক্ষ টাকা ভাড়া দাবী করেছিলাম তখন ডাব্লিউএফপি মধুর ছড়া চলে গেছেন। আর্মির দল কলেজের পশ্চিম পার্শ্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য যেখানে হেলিপ্যাড করেছিল, সেখানে চলে গেছেন। আর্মি না হলে লাগামহীন রোহিঙ্গাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো না। বড় বড় এনজিওরাও তাদের মায়ানমারে না যাওয়ার জন্য বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে থাকেন। রোহিঙ্গারা সেনাবাহিনীর উপর ছড়াও হতে দ্বিধাবোধ করে না। স্বল্প বয়সে বিয়ে করা, ঘন ঘন সন্তান জন্ম দেয়া হল তাদের প্রধান কাজ। সুন্দরী মহিলারা অনেকেই চট্টগ্রাম ঢাকা চলে গেছেন। সুন্দরী মহিলাদেরকে নিয়ে অনেকেই বিয়ে করে ফেলছেন। বাংলাদেশের টাকাওয়ালারা তো অধিক বিয়ে করতে পছন্দ করেন বেশী।
কক্সবাজার দরিয়া নগরে একদল সাংবাদিক আমাকে প্রশ্ন করলেন, আপনার কলেজের ১২ জন রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী লেখাপড়া করিতেছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ কে রোহিঙ্গা কে বাংলাদেশী এ গুলি যাচাই করে না। এস.এস.সি (পাস) সনদ থাকলে এইচ.এস.সিতে ভর্তি করাই, রোহিঙ্গা হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয় শেষ করেতো এইচ.এস.সিতে ভর্তি হয়েছে। এসব ধরার লোক হলো, সাংবাদিক, মেম্বার, চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। সেদিন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করার সময় আলহাজ্ব আবদুর রহমান বদি, এম.পি মহোদয়ও উপস্থিত ছিলেন। উনিও আমার প্রশ্ন করার উত্তর দিয়েছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকতে চিহ্নিত করেন নাই কেন। সাংবাদিকেরা তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখলে সঠিক রহস্য বের হয়ে যেতো। কিভাবে সে এইচ.এস.সিতে ভর্তি হতে পারল।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা উপাধীতে ভূষিত হলেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের কি অবস্থা হয় জানিনা বিগত চার বৎসরে এক লক্ষ সন্তান জন্ম নিয়ে লোক সংখ্যা ১১ লক্ষতে পৌছেছে নিশ্চয়! অনেকগুলি এনজিও রমরমা ব্যবসাতে লিপ্ত আছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে রোহিঙ্গাদেরকে জামাই আদরে রেখেছেন। ভাত রান্নার গ্যাস টাংকি, চাল, চিড়া রাখার জন্য প্লাস্টিকের ড্রাম, পানির জন্য কন্টেইনার সারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নির্বাচন বিদ্যুতায়ন করে দিয়েছেন। পারপিউম, টুথপেষ্ট, টুথপিক, লিপস্টিক পর্যন্ত সরবরাহ করেছেন। খাওয়ার পানির জন্য অসংখ্য ডিপ-টিউবওয়েল করে দিয়েছেন। প্রস্রাব-পায়খানার জন্য উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। মায়ানমারের লোকেরা যে জিনিস জীবনেও দেখেননি। সে গুলো ব্যবহার করে আরাম আয়েশ করতেছে।
উখিয়া কলেজে অসংখ্য মন্ত্রী, বড় বড় অফিসার সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিবর্গ উখিয়া কলেজ ক্যাম্পাসে এসে একবার ও প্রশ্ন করেননি। এই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কি অবস্থা ? তারা পাঠ করতে অসুবিধা হচ্ছে না তো। তাদের পর্যাপ্ত ক্লাশ রুম আছে কিনা, কোন মন্ত্রী কোন অফিসার খবর নেননি। তারা প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট করলে অফিসিয়াল উখিয়া কলেজকে সরকারি করতে পারতেন। কারণ আমরাই প্রধানমন্ত্রী মানবিকতা বেশী সহযোগিতা করেছি। দৃশ্যমান কিছুই করেননি। চলবে…….
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ (অব), উখিয়া কলেজ।
পাঠকের মতামত